img

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে—এমন খবর এখন নগরবাসীর মুখে মুখে। দলে ফেরার গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ায় শিগগিরই তিনি মেয়রের চেয়ারে বসবেন এমন প্রত্যাশা তার সমর্থকদের।

শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় শৃঙ্খলাভঙ্গে অভিযুক্ত নেতা ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই গাজীপুরের নগরবাসী বিশেষ করে জাহাঙ্গীর সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস শুরু হয়। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সয়লাব হয়ে গেছে এই খবর। ফেসবুকে পোস্ট, কমেন্ট, লাইকের বন্যা। অনেকেই জাহাঙ্গীর আলমের ছবি পোস্ট করে তার প্রত্যাবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ ‘প্রত্যাহার করায়’ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনেকে পোস্ট করেন। অনেকেই গাজীপুরে পুরোদমে ‍উন্নয়ন আবারও শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।  

রোববার দিনভর গাজীপুর মহানগরীর আনাচে কানাচে, চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে পথে ঘাটে একই প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আসছে। জাহাঙ্গীরের প্রত্যাবর্তন ‘টক অব দ্য গাজীপুরে’ পরিণত হয়েছে। 

রোববার সকাল থেকেই নগরীর হারিকেন এলাকায় জাহাঙ্গীরের বাসভবন ও এর সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং জাহাঙ্গীর আলমকে অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন। 

জাহাঙ্গীরবিরোধীরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এই নেতার প্রত্যাবর্তনকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করছেন তারা। 

জাহাঙ্গীর সমর্থকরা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গতি আনতেই তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে সংগঠন গতি পাবে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে মত তাদের। 

গত কয়েকদিন ধরেই গাজীপুরে আলোচনায় জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ইস্যু। গতকাল আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর জাহাঙ্গীর সমর্থকরা মোটর র্যা লি, আনন্দ মিছিল করেছেন আলিতে গলিতে। 

দলে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যা শোনেছেন ঠিকই জেনেছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গাজীপুর মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডের সবাইকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরকে আধুনিক বাসযোগ্য আধুনিক নগরী হিসাবে গড়ে তুলব। স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী দিনে আধুনিক গাজীপুর গড়ার কাজে হাত দেব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আমরা সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী করবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে যা যা করার সবই আন্তরিকতার সঙ্গে করব। 

এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা। কেউ বলছেন, গতকালের বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, নির্বাহী কমিটির সভায় জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো কথা উঠেনি। শৃঙ্খলাভঙ্গ ও নির্বাচনের সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হওয়া শতাধিক নেতার দলে ফেরত নেওয়ার আবেদন নিয়ে কথা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া নেতাদের মধ্যে যারা যারা আবেদন করেছেন সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। 
 
উল্লেখ্য ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৯ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয। ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও দলে ফিরতে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।

এই বিভাগের আরও খবর